সত্যি ঘটনা নিয়ে লেখা শুরু করছি। অনেকের হয়তো মনে থাকবে টি-সিরিজের গল্প। যারা জানে না, তাদের জানাই—আশির দশকের শুরুতে টেপ রেকর্ডারের রমরমা, ওয়াকম্যান ছিল স্ট্যাটাস সিম্বল। ক্যাসেটের ছড়াছড়ি চারদিকে। অনেকের সাধ থাকলেও সাধ্য ছিল না অত দাম দিয়ে ক্যাসেট কেনার। মুশকিল আসান হয়ে এল পাড়ার ছোট দোকানগুলো। অনেক কম টাকায় ওরা ফরমাশ অনুযায়ী গান রেকর্ড করে দিত। এতে নামি কোম্পানির ক্যাসেট বিক্রিতে প্রভাব পড়লেও, সাধারণ মানুষের সুবিধা হয়েছিল অনেক।
এই সময় দিল্লির এক ফলের রস বিক্রেতা, রস বিক্রির পাশাপাশি একটি ছোট ক্যাসেট কোম্পানি খুলে ফেললেন, নাম টি-সিরিজ। প্রথমে সফটওয়্যার দিয়ে পাইরেটেড গানের ব্যবসা দিয়ে যাত্রা শুরু করে গুলশান কুমারের টি-সিরিজ। তবে চুরি করে বেশিদূর এগোনো যাবে না বুঝে দিল্লি ছেড়ে সোজা চলে গেলেন বোম্বে। সেখানে জনপ্রিয় গানের কভার ভার্সানে অনামী গায়ক-গায়িকাদের দিয়ে গাইয়ে বাজারে ছড়িয়ে দিলেন। এইভাবেই টি-সিরিজের হাত ধরে পরিচিত হন সোনু নিগম আর অনুরাধা পাড়োয়াল। বাজারে এসে বড় কোম্পানিগুলোর মনোপলিতে আঘাত করেছিল টি-সিরিজ। মাত্র ১৫ টাকায় ক্যাসেট বিক্রি করছিল তারা, যা সাধারণ মানুষের মাঝে বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। বাধ্য হয়ে বড় কোম্পানিগুলোও তাদের ক্যাসেটের দাম কমাতে শুরু করে।
অনেক দিন আগের এই গল্প মনে করিয়ে দিল এলন মাস্কের টেসলা। টেসলা ব্র্যান্ডের গাড়ি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে খরচ প্রায় ৩৬% কমিয়ে এনেছে টেসলা, যার ফলে বড় বড কোম্পানিগুলো বিপাকে পড়েছে। একই ঘটনা ঘটেছে টেসলার নতুন মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রেও। তারা মাত্র ৩০,০০০ টাকায় একটি অত্যাধুনিক অ্যান্ড্রয়েড ফোন এনেছে, যা প্রযুক্তিতে স্যামসাং বা অ্যাপলের চেয়ে অনেক এগিয়ে।
মাস্কের গুঁতোই বড় কোম্পানিগুলো নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতার বদলে এখন হাত মেলাতে বাধ্য হচ্ছে। এর সাম্প্রতিকতম উদাহরণ হলো প্রতিদ্বন্দ্বী জিও এবং এয়ারটেলের চুক্তি। স্টারলিংক নেটওয়ার্ক চালু হওয়ার খবরে প্রতিযোগীএয়ারটেল ও জিও একসঙ্গে কাজ করতে রাজি হয়েছে। স্টারলিংকের উপগ্রহের মাধ্যমে নিমেষেই হাই-স্পিড ওয়াইফাই পৌঁছে যাবে সবার কাছে। আআমাদের প্রতিবেশী ভুটান ইতিমধ্যেই স্টারলিংক নিয়েছে, যেখানে মাথাপিছু খরচ মাসে. ৩৬০০.. থেকে ৪৫০০ টাকা। তবে আমাদের দেশে জনসংখ্যা বেশি হওয়ায় খরচ কম হবে বলে আশা করা যায়।
ননস্টপ ইন্টারনেট ব্যবহারের আশা করা গেলেও, এর জন্য মাশুল গুণতে হবে। আর সবচেয়ে বড় উদ্বেগের বিষয় হলো এতে কোনো সরকারি নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। কথায় কথায় ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়ার সুযোগ থাকছে না। এর সুফল যেমন আছে, তেমনি বিপদও রয়েছে। বিশেষ করে সীমান্ত এলাকায় জঙ্গিরা এই সুযোগ নিতে পারে।
আরেকটি চিন্তার বিষয় হলো স্টারলিংকের মালিক এলন মাস্কের অতীত কর্মকাণ্ড। গাজায় ইসরাইলি হানাদারি বন্ধ করে সেখানে বড় বড় হোটেল খুলতে চায় মার্কিন ধনকুবের ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার সহযোগী মাস্ক। স্টারলিংকে চলছে তাদের দোস্ত ইসরাইলের প্রচার, কিন্তু প্যালেস্টাইনের জন্য তাদের মাথাব্যথা নেই।
ইরাক আক্রমণের সময় কীভাবে মাস্কের সাহায্যে ব্ল্যাকআউট করা হয়েছিল, এখন একই কৌশল গাজায় ব্যবহার করা হচ্ছে। কে বলতে পারে, ভবিষ্যতে আমাদের দেশেও এমন কিছু ঘটবে না? কারণ, বিশ্ব রাজনীতির মাঠে আমি কি হনুর ট্র্যাক রেকর্ড খুব একটা ভালো নয়। চীনকে চোখ রাঙানোর বদলে দেশের জমি হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। বড় ব্যবসায়ীর কাছে দেশের সম্পদ বিনামূল্যে বিলিয়ে দেওয়া হয়েছেে।দেশ নিয়ে দেশেসেবকের ছদ্ম প্রেম আর বড় বড় ভাষণ লোকে ধরে ফেলছে। ভবিষ্যত খুব খারাপ বুঝেই বেপরোয়া হয়ে যা খুশি তাই করছে। স্টার লিংক এলে নেটস্পীড বাড়বে সন্দেহ নেই তবে বিনিময়ে আমাদের চড়া মাশুল গুনতে হবে, দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য কি ব্যবস্থা করছেন বোঝা মুশকিল। বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী সতর্ক করেছেন, দিদি জল মাপছেন আর অন্যেরা বাইরে বসে তামাশা দেখছেন। এখন দেখা যাক জল কোন দিকে গড়ায়।