কঠিন রাস্তা পার করে বড় মঞ্চে চেতন

কঠিন রাস্তা পার করে বড় মঞ্চে চেতন

দেবজিৎ মুখার্জি: আইপিএল ২০২৫কে স্বাগত জানাতে মুখিয়ে রয়েছে গোটা বিশ্ব। বলা যায়, এতটাই এই প্রতিযোগিতার জনপ্রিয়তা যে বর্তমানে ক্ষুদে থেকে বৃদ্ধ, প্রায় সকলেই এই টুর্নামেন্টের জ্বরে ভুগছেন। প্রতিনিয়তই সমাজমাধ্যমগুলিতে আইপিএল সংক্রান্ত পোস্ট দেখা যাচ্ছে ব্যবহারকারীদের তরফ থেকে। সংক্ষিপ্তভাবে বলতে গেলে, এই মুহূর্তে ক্রিকেটপ্রেমীরা তাকিয়ে রয়েছেন ক্যালেন্ডারের দিকে এবং অপেক্ষা করছেন ২২ তারিখের।

অন্যদিকে, অংশগ্রহণকারী সকল দল জয়কে প্রধান লক্ষ্য বানিয়ে শেষ মুহূর্তেও জোরদার অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছে। নিজেদের দুর্বলতাগুলিকে শক্তি বানাতে যেমন মনোযোগ দিচ্ছে, তেমনি খেলোয়াড়দের ফিটনেসের উপরও রাখা হচ্ছে নজর। যেহেতু আইপিএল সকল ক্রিকেটারের কাছে দক্ষতা প্রমাণ করার প্ল্যাটফর্ম ও ২০২৬ সালে টি২০ বিশ্বকাপ রয়েছে, তাই কোন ক্রিকেটারই খামতি রাখছেন না নেট প্র্যাকটিসে। ব্যাটার থেকে বোলার, সকলেই এখন ঘাম ঝড়াচ্ছে নেট সেশনে।

তবে টুর্নামেন্ট শুরুর আগেই ধাক্কা খায় গতবারের জয়ী দল কেকেআর, ওরফে কলকাতা নাইট রাইডার্স। আরসিবির বিরুদ্ধে উদ্বোধনী ম্যাচের আগে চোটের কারণে ছিটকে যান স্পিডস্টার উমরান মালিক। যদি কিভাবে তিনি চোট পেয়েছেন, সেটা এখনো অজানা। তাঁর পরিবর্তে দলে জায়গা পান তরুণ পেসার চেতন সাকারিয়া। স্বাভাবিকভাবেই, এই সুযোগ পেয়ে বেশ খুশি চেতন।

কিন্তু এই রাস্তা একেবারেই সহজ ছিলোনা চেতনের জন্য। বহু কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাঁকে। এখানেই শেষ নয়, তরুণ পেসারের জীবনে ঘটে এক ভয়াবহ দুর্ঘটনাও, যা তিনি স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। রীতিমতো ভেঙে পড়েছিলেন চেতন মানসিকভাবে। কিন্তু কোনকিছুই দমিয়ে রাখতে পারেনি তাঁকে। সব বাঁধা পেরিয়ে, তিনি জায়গা করে নেন ২২ গজে এবং একাধিকবার দুর্দান্ত পারফরমেন্স তুলে ধরেন স্টেডিয়াম ভর্তি দর্শকদের সামনে।

তবে কতটা কঠিন ছিল চেতনের এই সফর? তরুণ তারকার জন্ম ১৯৯৮ সালের ২৭শে ফেব্রুয়ারি গুজরাটের ভাবনগরে। তাঁর পিতা পেশায় একজন অটো চালক। ছেলেকে তিনি পরামর্শ দিতেন খেলাধুলা ছেড়ে লেখাপড়ায় মন দিতে। কিন্তু তাতে থামানো সম্ভব হয়ে ওঠেনি চেতনকে। ক্রিকেট থেকে কোনভাবেই দূরে সরে আসেননি। তবে ১৭ বছর বয়সে তিনি চোট পান, যার কারণে ৭-৮ মাস তাঁকে মাঠের বাইরে থাকতে হয় এবং সেই সময়ে তাঁর বড় সঙ্গী হয়ে ওঠে তাঁর মামা। তাঁর স্টেশনারি ব্যবসায় পার্ট-টাইম কাজ করতেন চেতন এবং তার পরিবর্তে তাঁর মামা ক্রিকেট সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ বহন করতেন। এছাড়াও বড় অবদান রয়েছে সৌরাষ্ট্রের তারকা ক্রিকেটার শেলডন জ্যাকসনের। এমআরএফ পেস ফাউন্ডেশনে ট্রায়ালের আগে যখন চেতনের জুতো ছিলোনা, তখন তিনি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন।

এভাবে লড়তে লড়তে অবশেষে ২০১৮-১৯ সালে শিকে ছেঁড়ে। সৌরাষ্ট্রের হয়ে প্রথম রঞ্জি ম্যাচ খেলতে নামেন চেতন এবং নেমেই তাক লাগিয়ে দেন। একাই তোলেন ফাইফার। এরপর ২০২০ সালে তিনি নেট বোলার ছিলেন আরসিবির। ট্রায়ালও দেন মুম্বাই ও রাজস্থানে। পরবর্তীকালে তাঁকে দলে ঠাঁই দেয় রাজস্থান রয়ালস। নিলামের আগে তাঁর ছোট ভাই আত্মহত্যা করেন এবং এই খবর তাঁকে ২ সপ্তাহ পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তাঁর মা তাঁকে এই খবরটি দেন যখন তিনি সৈয়দ মুস্তাক আলী টুর্নামেন্টের জন্য নিজেকে তৈরি করছিলেন। এই খবর তাঁকে মানসিকভাবে ভেঙে দেয়। প্রায় ৭-১০ দিন তিনি কারোর সঙ্গে কথা বলেননি। তবে কোনকিছুই তাঁকে দূরে রাখতে পারেনি তাঁর স্বপ্ন থেকে। অবশেষে তিনি রাজস্থানের হয়ে আইপিএলে নামেন। এখনো পর্যন্ত ১৯টি ম্যাচ খেলে তিনি নিজের ঝুলিতে তুলেছেন ২০টি উইকেট। জাতীয় দলের হয়েও ম্যাচ খেলেছেন তিনি। এখনো পর্যন্ত চেতন একটি একদিনের ম্যাচ এবং দুটি টি২০ ম্যাচ খেলেছেন। এবার দেখার বিষয় যে নাইটদের হয়ে কেমনটা পারফর্ম করে দেখান তিনি।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *