আমিরের সঙ্গে আলাপ মহেশ ভাটের ফিল্ম সেটে। মহেশের সঙ্গে আলাপ ছিল আগেই। কলকাতার এক ইংরেজি কাগজের জন্য ইন্টারভিউ নিয়েছি, এবার এসেছি আমির খানের মুখোমুখি হতে।
গোরেগাও সঞ্জয় গান্ধী নেশনাল পার্কে ফ্রাঙ্ক কাপরার ফিল্ম ইট হ্যাপেনড ওয়ান নাইট-এর রিমেক দিল হ্যায় কে মানতা নেহি-র আউটডোর শুট চলছিল। সময়মতো হাজির হয়েছি কলকাতার বহুল প্রচারিত বাংলা কাগজের জন্য আমির খানের ইন্টারভিউ নিতে। আমিরের ইন্টারভিউ নেওয়া শক্ত বললে কম বলা হয়, অসম্ভব বলাই ভালো।
শট ব্রেকের সময় গল্প হচ্ছিল। ইন্টারভিউয়ের কথা বলায় আমির না শোনার ভান করে উড়িয়ে দিলেন। মুসকিল আসান মহেশ ভাট, আমার হয়ে ব্যাট ধরলেন। অবশেষে রাজি হলেন Mr. Perfectionist আমির। এরপর আমিরের সঙ্গে দেখা আকেলে হাম আকেলে তুম-এর ইনডোর শুটে, এস.এন.ডি.টি কলেজে, নতুন বাংলা কাগজের জন্য মনীষা কৈরালার ইন্টারভিউ নিতে।
আমিরের সঙ্গে শেষ দেখা ফিল্ম সিটিতে, ইশক ফিল্মের সেটে। নামি সাপ্তাহিকের জন্য এক মহিলা সাংবাদিককে ইন্টারভিউ দিচ্ছিলেন আমির। অজয় দেবগন আর কাজলের রোমান্স শুরু ইশক ফিল্মের সেটে। শট দিয়েই কপোত-কপোতী ভ্যানিটি ভ্যানের নিভৃতে, আর প্র্যাঙ্কস্টার আমির ওদের পেছনে লাগছিলেন ভ্যানিটি ভ্যানের গায়ে থাপ্পড় মেরে। অনেকদিন আগের কথা হলেও সব মনে আছে।
এখন আমিরকে নিয়ে বাজার গরম। অভিনেতা হিসেবে আমির অসাধারণ, তা না বললেও চলে। মানুষ হিসেবেও আমির নিপাট ভালো, সোজা কথা সোজাভাবে বলেন। এই সোজা কথা বলার অভ্যাস তাকে বারবার বিপদে ফেলেছে। নর্মদা বাঁচাও আন্দোলন-এ মেধা পাটকরকে সমর্থন করেছিলেন, সে অপরাধে ক্ষতি হয়েছিল তার। ফানা ফিল্মটি সব জায়গায় মুক্তি পেতে দেয়নি সাম্প্রদায়িক চক্র। স্ত্রী কিরণ রাও যখন দেশের হিংসা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন, তখনও তাকে পরোক্ষভাবে বয়কটের শিকার হতে হয়। এরপর PK-এর উপর আক্রমণ আসে, অভিযোগ ওঠে আমির ঠাকুর-দেবতা নিয়ে মশকরা করেছেন।
তর্কের খাতিরে যদি তা সত্যি হয়ও, তবে কেন ওহ মাই গড নিয়ে চুপ ছিল সেই অভিযোগকারীরা? এবার তারা দ্বিগুণ উৎসাহে নেমেছে আমিরের নতুন ফিল্ম লাল সিং চাড্ডা-এর বিরুদ্ধে, যা হলিউডি ফিল্ম ফরেস্ট গাম্প-এর রিমেক। সোশ্যাল মিডিয়া হাতিয়ার করে চলেছে বয়কটের প্রচার।
অশিক্ষিতরা জানেই না, ভূজে লগান-এর শুট যেখানে হয়েছিল, সেই গোটা গ্রামটির দায়িত্ব নিয়েছিলেন আমির খান। পানি ফাউন্ডেশন মহারাষ্ট্রের খরা-আক্রান্ত তিনটি গ্রাম দত্তক নিয়ে আমূল পরিবর্তন এনেছে। দেশের মানুষের সমস্যা নিয়ে সত্যমেব জয়তে অনুষ্ঠান করে সমস্যার সমাধান খুঁজেছেন তিনি।
শেষ করছি একটি উদাহরণ দিয়ে। দঙ্গল ফিল্মটি পাকিস্তান রেকর্ড দামে কিনে দেখাতে চেয়েছিল, কিন্তু তাদের সেন্সরের শর্ত ছিল ভারতের জাতীয় সংগীত দেখানো চলবে না। আমিরের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো মেনে নিতেন, কিন্তু আমির রাজি হননি। জাতীয় সংগীতের মান রাখতে কোটি কোটি টাকা হেলায় ছেড়ে দিয়েছেন। অন্য কেউ হলে পাবলিসিটির বন্যা বয়ে যেত, কিন্তু আমির এই তথ্য গোপন রেখেছেন।
এরপরও যদি কেউ আমিরের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলে, তবে তাদের সম্পর্কে আর কিছু বলার থাকে না। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় যারা ব্রিটিশদের পদলেহন করেছিল, তারা আজ আমাদের দেশপ্রেম শেখাতে চায়—এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে!
আমির খান ও কিরণ রাও-এর ছবি লা পাত্তা লেডিজ অস্কার না পেলেও আন্তর্জাতিকভাবে সমাদৃত হয়েছে। আমার পরিচিত এসআরএফটিআই-এর প্রাক্তনী বিবেক গোস্বামী লা পাত্তা লেডিজ-এর গল্প লিখেছেন এবং সদ্যসমাপ্ত ইফি-তে সেরা গল্পের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন।
এবার আমিরের আগামী ফিল্মের খবর। আমিরের সিতারে জমিন পার এ বছর ক্রিসমাসে মুক্তি পেতে চলেছে। ছবির নায়িকা জেনেলিয়া দেশমুখ। তারে জমিন পার ফিল্মের সিক্যুয়াল এই ছবি, যেখানে একদল হ্যান্ডিক্যাপড শিশুর গল্প দেখানো হবে, যারা স্রোতের বিপরীতে সাঁতার কেটে জয়ী হবে।
আমিরের হাত ধরে কামব্যাক করছেন রাজকুমার সন্তোষী। তার নতুন ফিল্ম লাহোর ১৯৪৭—দেশভাগের সময় ভারত থেকে লাহোর অভিযানের কাহিনি। এ ফিল্মের নায়ক সানি দেওল, নায়িকা প্রীতি জিন্টা। প্রীতিও আমিরের হাত ধরে কামব্যাক করছেন।
সময় কীভাবে চলে যায় বোঝা যায় না। মনে হয় এই তো সেদিন আমিরের ইন্টারভিউ নিলাম, সেদিনের ২৬ বছরের তরুণ আমির আজ ৬০-এ পা দিলেন। আমির মানেই চমক ও সৃষ্টি। তিনি এভাবেই এগিয়ে চলুন, আমাদের বারবার চমকে দিন—এই কামনা করি। ৬০ রান নয়, আমরা চাই সেঞ্চুরি!