হাফিজুর রহমান, কলকাতা: বেহালা চৌরাস্তা থেকে মদনমোহন তলা অটোতে মিনিট ছয়েক। সেখানে মুরাদপুর প্রায়মারি স্কুলের ঠিক উল্টো দিকে এক পানের দোকান l সেই পানের দোকান এর সন্ধানে অসুস্থ শরীরে এসে হাজির হলাম আমার লাঠি দেবজিতকে নিয়ে।
ভাবছেন পানের দোকান নিশ্চয় স্পেশাল পান অফার করছে যার জন্য সব কিছু ফেলে পার্ক সার্কাস থেকে প্রায় পনেরো কিলোমিটার দূরে এসেছি। ভুল ভাবছেন আমি পানাশক্ত নই, কাজেই …. ব্যাপার টা খুলে বলি,এত দূরে ছুটে আসার কারণ ৪-×৪ ফিট মাপের পানের দোকান নয় বরং দোকানের মালিক পিন্টু পোহান। কথা বলতে না বলতেই চা বিস্কুট এল।
চা খেতে খেতে দোকানটিতে চোখ বোলাচ্ছিলান পানের মাল মশলার পাশে রাশি রাশি বইয়ের সম্ভার।
প্রথম দর্শনে মনে হবে এটা পান গুমটি না বইয়ের দোকান!
আসুন আপনাদেরকে সঙ্গে আজকের কাহিনীর নায়ক পিন্টু পোহানের আলাপ করিয়ে দিই। পিন্টু পোহান দেখতে ফিল্মি নায়কের মত নয় বরং এর ঠিক বিপরীত আমার আপনার মত সাধারণ চেহারার মানুষ।
শ্যামলা বরণের মাঝ বয়সী পিন্টুর চেহারার মধ্যে আত্মবিশ্বাস চুঁইয়ে পড়ছিল।আর প্লাস পয়েন্ট ওর উজ্জ্বল হাসি।
পিন্টু পোহান সাধারণ মানুষ হয়েও অসাধারণ আমার চোখে কারণ এই মোবাইল সংস্কৃতির সময় ও লোককে বই পড়াতে চায়ছে। একে বিপরীত জলে ডুব সাঁতার দেওয়া ছাড়া কি বলতে পারি!
পিন্টু গত বছর থেকে শুরু করেছে বই পড়ার গন সমাবেশ। ছেলে থেকে বুড়ো সবাই যোগ দিয়েছে এই বই পড়ার মহোৎসবে। পিন্টুর কথায় এটা বই পূজো। রিলে রেসের মত মানুষ পিন্টু পোহান পুজোর হৈ হুল্লোর বাদ দিয়ে বই পড়ছে এটা বই যারা ভালবাসে তাদের কাছে কত আনন্দের বা গর্বের বিষয় সেটা বলতে গিয়ে সেন্টিমেন্টাল হয়ে পড়ছি।
পিন্টুর পানের দোকান আমার কাছে মন্দির মসজিদ চার্চ গুরূদ্বারা সব । কেন ,সেটা বুঝিয়ে বলি।
পিন্টুর পানের দোকান শুধু ওর রুজি রুটি যোগান দিয়েছে সেটা নয় বরং ওকে জুগিয়েছ সাহস। যে সাহসের ডানায় ভর করে পিন্টু পেরিয়েছে একের পর এক বাধা। এখানে বসেই পানের খদ্দের সামলাতে সামলাতে সে গ্রাজুয়েট হয়েছে, মাস্টার্স শেষ করেছে। যারা পানের দোকানি বলে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করত তাদের নিঃশব্দে জবাব দিয়েছে। বলতে ভুলে গেছি পিন্টু ডজন খানেক বই এর লেখক, শুধু তাই নয় ওর লেখা বেরিয়েছে এ বাংলার ছোট বড় অজস্র দৈনিক আর পত্র পত্রিকায়। ইচ্ছে থাকলে কি করতে পারি আমরা তার উদহারন পিন্টু পোহান। এ বাংলার মুখ ও বই প্রেমীদের তরফ থেকে ওর প্রতি রইল অজস্র অভিনন্দন আর শুভেচ্ছা।