দেবজিৎ মুখার্জি: এই মুহূর্তে জোরকদমে চলছে ভারতীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে জনপ্রিয় ফ্রাঞ্চাইজি লিগ আইপিএল। ৮ থেকে ৮০, প্রায় সকলেই এখন টেলিভিশন সেটে চোখ জমিয়ে রেখেছেন এই মেগা টুর্নামেন্টের আনন্দ উপভোগ করতে। এছাড়া মোবাইলেও ব্যস্ত রয়েছে যুব সমাজ। কেউই মিস করতে নারাজ এই প্রতিযোগিতার থ্রিল। বলতে গেলে, এই মুহূর্তে গোটা ভারতবর্ষে এখন চলছে আইপিএল ফিভার।
টুর্নামেন্টের নিলাম এবারও হয়েছিল সৌদি আরবে এবং তাতে জায়গা পান বহু তরুণ থেকে তারকা ক্রিকেটার। সকল ফ্রাঞ্চাইজিই বুদ্ধি করে নিজেদের সংসার গুছিয়েছে। চড়া ও কম দামে কেনা হয়েছে একাধিক দেশি ও বিদেশী ক্রিকেটারকে। তবে এই সবকিছুর মাঝে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সফল হয়েছিলেন এক টিনেজার। নাম বৈভব সূর্যবংশী। বয়স তাঁর ১৪। ১ কোটি ১০ লক্ষ টাকায় তাঁকে নিজেদের শিবিরে জায়গা দেয় রাজস্থান রয়্যালস এবং এরপর তিনি রাতারাতি হয়ে ওঠেন এক আলোচনার বিষয়। বলতে গেলে একেবারে টক অফ দা টাউন হয়ে ওঠেন এই নাবালক ক্রিকেটার।
যখন টুর্নামেন্ট শুরু হয় তখন ভারতীয় ক্রিকেটপ্রেমীরা অপেক্ষায় ছিলেন কবে এই ১৪ বছরের ছেলেটির অভিষেক ঘটবে। অবশেষে দল তাঁকে মাঠে নামায় ঋষভ পান্থের লখনৌ সুপার জায়েন্টসের বিরুদ্ধে। নেমেই একেবারে তাক লাগিয়ে দেন বৈভব। বিস্তারিতভাবে বলতে গেলে, ২২ গজে নেমেই এলএসজির বোলারদের একেবারে চমকে দেন তিনি। প্রথম বলেই শার্দুল ঠাকুরকে ছক্কা হাঁকান, যা দেখে গোটা স্টেডিয়ামে বয়ে হাত-তালির বন্যা। ধারাভাষ্যকাররাও বেশ মুগ্ধ হন তাঁর প্রতিভায়। ২০ বলে ৩৪ রানের একটি দুর্দান্ত ইনিংস খেলে তিনি প্যাভিলিয়নে ফিরে যান। তবে ডাগা-আউটে যাওয়ার সময় তাঁর চোখে দেখা যায় জল। ম্যাচটি রাজস্থান ২ রানে হারলেও এই টিন ক্রিকেটারের ব্যাটিং মন জয় করেছে সকলের।
কিন্তু আইপিএলের মতো বড় মঞ্চে খেলার রাস্তাটা ঠিক কেমন ছিলো বৈভবের? চলুন জেনে নেওয়া যাক তাঁর এই সফরের কথা। বৈভবের জন্ম বিহারে ২০১১ সালের ২৭শে মার্চে। এক মিডিয়ার রিপোর্ট অনুযায়ী তাঁর বাবা সঞ্জীব সূর্যবংশী পেশায় একজন সাংবাদিক ও কৃষকও। যখন তাঁর বয়স ১২, তখন তিনি সুযোগ পান রঞ্জিতে। এরপর তাঁর ব্যাট হাতে দুর্দান্ত পারফরমেন্স তাঁকে জায়গা করিয়ে দেয় ভারতের অনূর্ধ্ব-১৯ দলে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি ৫৮ বলে শতরান হাকিয়ে তাক লাগিয়ে দেন এবং চলে আসেন বহু প্রাক্তন তারকার নজরে। অবশেষে আসে সেই স্বপ্নের দিন। চলতি আইপিএলের নিলামে তাঁকে দলে জায়গা করে দেয় রাজস্থান।
এই খবরে অত্যন্ত খুশি হন বৈভবের পরিবার। তাঁর পিতা এক সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে জানান যে বৈভব একেবারেই ঠিক দলে জায়গা পেয়েছেন কারণ তিনি মনে করেন রাজস্থান রয়েলস এমন একটি দল যা বরাবর তরুণ ক্রিকেটারদের আগে এগিয়ে যেতে সাহায্য করে। তাঁর কোচ প্রমোদ কুমারও বেশ খুশি হয়েছেন এবং জানিয়েছেন যে বৈভব বোধহয় পৃথিবীতে এসেছেন ক্রিকেট খেলতে। এখানেই শেষ নয়, তিনি আরো জানান যে বৈভব খুব একটা বেশি কারও সঙ্গে কথা বলেনা, তবে ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হলে সারাদিন কাটিয়ে দিতে পারেন।
২২ গজে ডেবিউ করার পর বৈভব যে ইনিংস খেলেন তা দেখে গোটা রাজস্থান দল সহ বহু প্রাক্তন ক্রিকেট তারকা বেশ খুশি হন। অনেকে দাবি করেছেন যে বয়স ১৪ হলেও বৈভব ম্যাচিউরিটি দেখিয়েছেন ৩০ বছর বয়সী ক্রিকেটারদের মতো। আবার অনেকে এটাও দাবি করেছেন যে ভবিষ্যতে ভারতীয় ক্রিকেট দলের একটি নক্ষত্র হয়ে উঠবেন বৈভব। যদিও শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিণতি কি হয় তা বলবে সময়।